MUSLIM LAW


ইসলামী শরিয়াহ্ পুনর্গঠন প্রসঙ্গে

১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইজতিহাদের অধিকার প্রয়োগ করে। এমন একটি রায় 'বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশনস'-এর ১৭শ খণ্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। অসিয়ত বা উইল বিষয়ে প্রচলিত ইসলামী আইন হচ্ছে, উত্তরাধিকারীর অনুকূলে অসিয়ত গ্রাহ্য হবে না, যদি না অসিয়তকারীর মৃত্যুর পর তাঁর অন্য উত্তরাধিকারীরা এতে সম্মতি দেয়। আমার এই রায়ে আইনটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।

রায়টিতে কোরআনের সুরা বাকারার ১৮০-১৮২তম আয়াতের উদ্ধৃতি দেওয়া হয় : 'তোমাদের কারো যখন মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়, সে যদি ধন-সম্পত্তি রেখে যায় তাহলে ন্যায়ভাবে মা-বাবা ও অতি নিকটাত্মীয়র জন্য অসিয়ত করার বিধান দেওয়া হলো। এটা ধর্মভীরুদের জন্য দায়িত্ব। অসিয়ত শোনার পর যদি কেউ তার পরিবর্তন করে তাহলে যারা পরিবর্তন করে, তাদের ওপর এর পাপ পতিত হবে। আল্লাহ মহাশ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। যদি কেউ অসিয়তকারীর পক্ষপাতিত্ব বা অন্যায়ের আশঙ্কা করে, আর সে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তাতে তার কোনো দোষ নেই। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।'

স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে, উপরোক্ত আয়াতগুলোয় উত্তরাধিকারীদের অনুকূলে অসিয়ত করতে নিষেধ করা হয়নি। অথচ ইসলামী আইনবেত্তাদের মতে, যেহেতু কোরআনের অন্য আয়াতগুলোয় একজন প্রয়াত ব্যক্তির কিছু স্বজনকে উত্তরাধিকারসূত্রে নির্দিষ্ট অংশ দেওয়া হয়েছে, সেহেতু ওই আয়াতগুলো দ্বারা অসিয়তবিষয়ক আয়াতগুলো খণ্ডন বা রদ হয়েছে এবং এই যুক্তির সমর্থনে তারা কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি উল্লেখ করেন : "আমি কোনো 'আয়াত' রহিত করলে বা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম বা সমপর্যায়ের 'আয়াত' আনয়ন করি। তুমি কি জানো না যে আল্লাহ সব কিছুর ওপর শক্তিমান?" (কোরআন-২ : ১০৬)।

এখানে 'আয়াত' অর্থ কোরআনের বচন বা আয়াত নয়, এর সঠিক অর্থ ঐশী বাণী। আবদুল্লাহ ইউসুফ আলি তাঁর কোরআন শরিফের ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থে এই আয়াত শব্দের দুটি অনুবাদ- রিভিলেশন বা ঐশী বাণী করেছেন এবং এর সমর্থনে বিস্তারিত টীকা লিখেছেন (মদিনাস্থ কিং ফাহদ কমপ্লেঙ্ প্রকাশিত ওই গ্রন্থটির ৪৩ পৃষ্ঠায় ১০৭ নম্বর পাদটীকা দ্রষ্টব্য)।
এটা কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় যে কোরআনের প্রাচীন কিছু ভাষ্যকার ওই আয়াত শব্দটির অর্থ কোরআনের আয়াত বা বচন ধারণায় কোরআনের কোনো কোনো আয়াত অন্য কোন কোন আয়াত দ্বারা খণ্ডিত বা রদ হয়েছে তা খুঁজতে থাকেন। তাঁরা খণ্ডিত আয়াতগুলো ও খণ্ডনকারী আয়াতগুলোর নাম দেন যথাক্রমে 'মানসুখ' ও 'নাসিখ'। ইবনে হাজাম ২১৩টি মানসুখ আয়াত নির্দিষ্ট করেন। সংখ্যাটি বিস্ময়কর নয় কি? প্রায় ১০০ বছর পর ইবনে আল-আরাবি সংখ্যাটি কমিয়ে ২০-এ আনেন। এর ৭০০ বছর পর শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী তাঁর 'আল-ফাউজুল কবির ফি উসুলিত তাফসির' (কোরআন ব্যাখ্যার মূলনীতি) গ্রন্থে মানসুখ আয়াতের সংখ্যা অসিয়তের আয়াতসহ পাঁচটি নির্দেশ করেন।

অবশেষে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষায় লেখা 'আল কোরআনে নাসিখ ও মানসুখ' প্রবন্ধে বলেন, 'বিখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম রাযী তাঁহার তাফসিরে বলিয়াছেন যে যুক্তিবাদী ভাষ্যকার আবু মুসলিম ইসফাহানির মতে, কোরআনের কোনো আয়াত খণ্ডিত হয় নাই। বরং কোরআন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ তাওরাত, ইনজিল প্রভৃতির খণ্ডনকারী। এই মত অতি যুক্তিসংগত। প্রসঙ্গত এতে বোঝা যায়, পূর্ব উদ্ধৃত দুই আয়াতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের আপত্তি খণ্ডন করা হইয়াছে। বস্তুত কোরআন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের পুণ্য দিন শনি ও রবিবারের স্থলে শুক্রবারকে পুণ্য দিন করিয়াছে। তাওরাতের নিষিদ্ধ উষ্ট্রমাংসকে হালাল করিয়াছে, বায়তুল মুকাদ্দাসের স্থলে কাবাকে কিবলা করিয়াছে।' অতঃপর বিস্তারিত আলোচনার পর উপসংহারে তিনি প্রবন্ধটিকে বলেন, 'আমরা এ পর্যন্ত যাহা আলোচনা করিলাম, তাহাতে স্পষ্ট প্রমাণিত হইল যে কোরআনে কোনো খণ্ডিত বাক্য বা মানসুখ নাই। এই আল্লাহর বাণী চিরস্থায়ী, যেমন- আল্লাহ ভ্রম প্রমাদবর্জিত।' প্রবন্ধটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত 'ইসলামে চিন্তার বিকাশ' গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।

অসিয়তবিষয়ক কোরআনের আয়াতগুলো রদ হয়নি যুক্তি প্রদানকালে ড. শহীদুল্লাহ লিখেছেন, 'এই আয়াতগুলো প্রয়াত ব্যক্তির অমুসলিম মা-বাবা বা পিতৃহীন পৌত্রের জন্য প্রযোজ্য হইবে।' আমাদের রায়ে এই মত খণ্ডন করে বলা হয়, অসিয়তবিষয়ক আয়াতগুলো এবং উত্তরাধিকারবিষয়ক আয়াতগুলো পরস্পরবিরোধী নয়; যদিও এদের আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হয়। কারণ প্রথমোক্তগুলো অসিয়তবিষয়ক নিয়মাবলি এবং শেষোক্তগুলো অয়িসতবহির্ভূত সম্পত্তির উত্তরাধিকারবিষয়ক নিয়মাবলি। উভয় নিয়মাবলির প্রয়োজন আছে, যেহেতু অয়িসত করা বাধ্যতামূলক নয়, এটা দায়িত্বনির্ভর পরামর্শ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসিয়ত করার প্রয়োজন নাও হতে পারে অথবা আংশিক সম্পত্তির জন্য অসিয়ত করার প্রয়োজন হতে পারে। আমি হাইকোর্ট বিভাগের একটি দেওয়ানি দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি থাকাকালে কয়েকটি কেসে প্রচলিত ইসলামী পারিবারিক আইনের (ফিকহ) যথার্থতা পর্যালোচনা করার সুযোগ পাই। আমার প্রদত্ত চারটি রায়ের আলোচনা এখন করব। এগুলো হচ্ছে রোমেনা আফরিন বনাম ফকির আশরাফ উদ্দিন, জেসমিন সুলতানা বনাম মোহাম্মদ ইলিয়াস এবং নূর আখতার বনাম আবদুল মাবুদ চৌধুরী। রায়গুলো 'বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশনস'-এর যথাক্রমে ১৬শ খণ্ডের ৪৮৭ পৃষ্ঠায়, ১৭শ খণ্ডের ৪ পৃষ্ঠায় এবং ১৬শ খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে।

রোমেনা আফরিন বনাম ফকির আশরাফ উদ্দিন

পক্ষদ্বয়ের পরিবার পরস্পর অপরিচিত ছিল এবং এটা আয়োজিত বিয়ে। বর যুক্তরাষ্ট্রের এক অভিবাসী। বিয়ের সময় বলা হয়, তিনি অবিবাহিত। পরে প্রকাশ পায় যে তিনি বিদেশে দুইবার বিয়ে করেছেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক থাকাকালে রোমেনাকে বিয়ে করেন। যা হোক, প্রায় তিন বছর বিবাহিত জীবন যাপনের পর আপসে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁদের দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে, যাদের বয়স কেসের সময় প্রায় তিন বছর ও দুই বছর ছিল। বিবাহবিচ্ছেদের শর্ত অনুযায়ী কন্যা দুটির অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধানের ভার বাবা আশরাফ পান। কিন্তু মাতৃহৃদয় কি তা মেনে নিতে পারে? ডিসেম্বর মাসে কন্যা দুটিকে তাদের বাবার কাছে দিলেও এপ্রিল মাসে তাদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে রোমেনা পারিবারিক আদালতে কেস করেন। অবশেষে কেসটি আমাদের বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে এবং এ বিষয়ে প্রচলিত ইসলামী আইন সঠিক কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ আমরা পাই।

প্রচলিত ইসলামী আইন হচ্ছে, নাবালক সন্তানের একটি নির্দিষ্ট বয়সকাল পর্যন্ত মা অভিভাবকত্বের দাবি করতে পারেন এবং দ্বিতীয় বিয়ে করলে এই দাবি গ্রাহ্য নয়। পুত্রসন্তানের জন্য এই বয়সসীমা সর্বাধিক ৯ বছর এবং কন্যাসন্তানের জন্য ঋতুকালতক। কিন্তু আমরা সহিহ হাদিসে এর সমর্থন পাই না, বরং সহিহ আবু দাউদের দ্বিতীয় খণ্ডে ২২৭৬ নম্বর হাদিসটি যা মুসনাদ-ই-আহম্মদ ইবনে হাম্বলের দ্বিতীয় খণ্ডে ১৮২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে তা নিম্নরূপ-

"আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস বর্ণনা করেন, একজন স্ত্রীলোক আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বললেন, 'এইটি আমার পুত্র, আমার গর্ভ ছিল তার আশায়, আমার স্তন ছিল তার ঝরনা আর আমার কোল ছিল তার দোলা। তার পিতা আমাকে তালাক দিয়েছে। এখন পুত্রটিকে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিতে তার পিতা সুদৃঢ়।' আল্লাহর রাসুল (সা.) স্ত্রীলোকটিকে বলেন, 'তার ওপর একমাত্র তোমার দাবি যত দিন পর্যন্ত তুমি পুনর্বিবাহ করবে না'।"

উপরোক্ত হাদিসের ভিত্তিতে আমরা রোমেনার অনুকূলে ডিক্রি দিই। আমাদের সিদ্ধান্ত : নাবালক পুত্র অথবা কন্যাসন্তানের অভিভাবকত্বের দাবিদার মা এবং তিনি পুনর্বিবাহ করলেই অভিভাবকত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন তা উপরোক্ত হাদিস নির্দেশ দেয় না। সে ক্ষেত্রে মা ও বাবা সমদাবিদার হবেন এবং কার অভিভাবকত্বে থাকলে শিশুটির মঙ্গল হবে তা আদালতকে বিবেচনা করতে হবে।

জেসমিন সুলতানা বনাম মোহাম্মদ ইলিয়াস

পক্ষদ্বয়ের বিয়ে হয় ১৯৯২ সালের মে মাসে এবং পরের বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে সুলতানা পিতৃগৃহে বাস করতে বাধ্য হন। অতঃপর তিনি দেনমোহর ও ভরণ-পোষণের দাবিতে মোকদ্দমা করেন। ইলিয়াস মোকদ্দমায় জবাব দেন যে সুলতানা পিতৃগৃহে স্বেচ্ছায় বাস করায় সে ভরণ-পোষণ পাবে না। পারিবারিক আদালত সুলতানাকে দেনমোহরের এবং ভরণ-পোষণ বাবদ মাসিক ৫০০ টাকা ডিক্রি দেন। অতঃপর বিষয়টি নিম্ন আপিল আদালত হয়ে আমাদের বেঞ্চে আসে। শুনানিকালে আমরা লক্ষ করি, ইলিয়াসের কেস যে সুলতানা পিতৃগৃহে স্বেচ্ছায় বাস করছে তা উভয় আদালতই বিবেচনা করেনি। বিষয়টি বিবেচনাকালে সুলতানার পক্ষে একটি শপথপত্র পেশ করা হয়, যার সঙ্গে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে ইলিয়াস কর্তৃক দাখিলকৃত একটি আবেদনপত্রের কপি সংযুক্ত ছিল। এই আবেদনপত্রে ইলিয়াস দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি প্রার্থনা করে।

এ প্রসঙ্গে ইসলাম বহুবিবাহ সমর্থন করে কি না তা পরীক্ষা করার সুযোগ আমরা পাই। অদ্যাবধি এ বিষয়ে আইনবেত্তাদের মধ্যে প্রচুর মতভেদ বিদ্যমান এবং এর উদ্ভব কোরআনের সুরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতের তাৎপর্য নিয়ে : 'তোমরা যদি ভয় করো যে পিতৃহীনা মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে তোমাদের পছন্দমতো দুই, তিন অথবা চার, আর যদি ভয় করো যে সম-আচরণ করতে পারবে না, তাহলে একজন।'

উল্লেখ্য, এ আয়াতটি নাজিল হয় তৃতীয় হিজরিতে ওহুদ যুদ্ধের পর। এই যুদ্ধে অনেক মুসলমান শহীদ হওয়ায় এতিম ও বিধবার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আরো উল্লেখ্য, এরপর সপ্তম হিজরিতে সুরা আহযাবের ৫২ নম্বর আয়াত নাজিল হয় : 'এরপর তোমার (অর্থাৎ আল্লাহর রাসুল) জন্য কোনো নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়...।' এই আয়াত নাজিলের পর আল্লাহর রাসুল (সা.) আর বিয়ে করেননি।

আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী তাঁর বহুল পঠিত ও আদৃত 'দ্য হোলি কোরআন : টেক্সট, ট্রান্সলেশন অ্যান্ড কমেনটারি' (তৃতীয় সংস্করণ) বইটিতে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন : 'অজ্ঞানতার যুগে বাধাহীন পত্নী গ্রহণের পরিবর্তে সর্বাধিক পত্নী গ্রহণের সংখ্যা চার সীমিত করা হয় এই শর্তে যে পত্নীদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম-আচরণ করতে হবে। কিন্তু শর্তটি পালন দুঃসাধ্য বিধায় আমার প্রতীতি এই যে আয়াতটি এক বিয়েকে সুপারিশ করে।'

এই মতটি সঠিক। কোরআনে সুরা নিসার ১২৯ নম্বর আয়াতে এর সমর্থন মেলে : 'এবং তোমরা যতই আগ্রহ করো না কেন, তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনোই পারবে না...।' সুতরাং 'সম-আচরণ করতে পারবে' হচ্ছে একাধিক পত্নী গ্রহণের শর্ত। কেউ এর উদার অর্থ করেছেন যে সম-আচরণ হবে প্রেমপ্রীতি সর্ববিষয়ে, আবার কেউ কেউ সংকীর্ণ অর্থ করেছেন যে সম-আচরণ হবে কেবল ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান বিষয়ে। আমাদের রায়ে সংকীর্ণ অর্থ অগ্রাহ্য করে উদার অর্থটি গ্রহণ করা হয় নিম্নলিখিত হাদিসটির ভিত্তিতে :

"আল-মিসওয়ার বিন মাখরামা বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে মিম্বার থেকে বলতে শুনেছি, 'বনি হাশিম বিন আল-মুখিরা আমাকে অনুরোধ করেছে যে আমি যেন তাদের কন্যার সঙ্গে আলী বিন তালিবের বিয়েতে অনুমতি দিই। কিন্তু আমি অনুমতি দিইনি এবং অনুমতি দেব না, যতক্ষণ না আলী আমার কন্যা ফাতিমাকে তালাক দেয়। কারণ ফাতিমা আমার দেহের টুকরা এবং আমি ঘৃণা করি, যা সে ঘৃণা করে আর যা তাকে ব্যথা দেয়, তা আমাকেও ব্যথা দেয়'।" (সহিহ আল বুখারি, ৭ম খণ্ড, নম্বর ১৫৭)।

সুতরাং আল্লাহর রাসুল তাঁর জামাতাকে আরেকটি পত্নী গ্রহণে অনুমতি দেননি- অবশ্যই এ কারণে যে হজরত আলী দুই পত্নীর প্রতি সর্ববিষয়ে সম-আচরণ করতে পারবেন না। তিউনিসিয়া ১৯৫৭ সালে আইন করে একাধিক বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে।


1.সমস্যা

প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে ২০০৮ সালে আমরা কাবিন রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে করি কিন্তু এই বিয়েতে আমার স্ত্রীর পরিবার রাজি ছিল না সে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে আমার কাছে চলে আসে এবং পরে আমরা বিয়ে করি এর পর থেকে আমরা আমার পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করি কিন্তু ২০০৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর সঙ্গে আমার দাম্পত্য কলহের সুযোগ নিয়ে শ্বশুর আমার স্ত্রীকে তাঁর কাছে নিয়ে যান এবং তার পর থেকে আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে দিচ্ছেন না কিছুদিন পর আমার বাসার ঠিকানায় একটি তালাকনামা পাঠানো হয় তবে আমার ধারণা, আমার স্ত্রী স্বেচ্ছায় এই তালাকানামা পাঠায়নি কারণ তালাকনামায় তার স্বাক্ষর, বিয়ের তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদির সঙ্গে আমাদের বিয়ের কাবিননামা কোর্ট অ্যাফিডেভিটের কোনো মিল নেই বিষয়টি আমি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানানোর পর আমার শ্বশুরকে বারবার তলব করা সত্ত্বেও তিনি হাজির হচ্ছেন না আমি জানতে চাই, এই তালাক আইনগত বৈধ বলে বিবেচিত হবে কি না আর যদি অবৈধ হয়, তাহলে এর বিরুদ্ধে আমি কী ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি


1.সমাধান


 
আপনি আদালতে দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের মামলা করতে পারেন সে ক্ষেত্রে যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ পেশ করে স্ত্রীকে ফেরত আনা সম্ভব

2.সমস্যা


২০০৫ সালে আমরা দুজন পরিবারের অনুমতি ছাড়া অ্যাফিডেভিট করে নোটারি পাবলিক অফিসের মাধ্যমে সরকারি কাজি দিয়ে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে করি আমি আমার স্ত্রী এখন স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছি চার মাস পর মেয়েপক্ষ বিয়ের ঘটনা জানলে আমাকে ডেকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরামর্শ দেয় এবং তারপর মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে বলে আমি অনেক কষ্টে রাজি হই কিন্তু এর এক দিন পর অন্য কাজির কাছ থেকে দুজন সাক্ষীর স্বাক্ষর দিয়ে অপূর্ণ ডিভোর্স পেপার তুলে আনে এর সাত-আট দিন পর আমার স্ত্রীকে শারীরিক মানসিক চাপ দিয়ে স্বাক্ষর নেয় কিন্তু তখন থেকে আজ পর্যন্ত এক দিনের জন্যও আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়নি এমনকি শারীরিক সম্পর্কও আছে আমার স্ত্রীর বক্তব্য, তাকে জোর করে ডিভোর্স করানো হয়েছে আমরা দুজন দুজনকে চাই এখন মেয়েপক্ষ অন্যত্র বিয়ের জন্য আমার স্ত্রীকে শারীরিক মানসিকভাবে নির্যাতন করছে অবস্থায় আমি কি আইনের আশ্রয় নিতে পারি? তা কিভাবে? আর ডিভোর্স বৈধ হলে আবার বিয়ে করতে হিল্লা বিয়ের প্রয়োজন আছে কি? উল্লেখ্য, আমাকে তালাক নোটিশ পাঠিয়েছে ২০০৫ সালে, অর্থাৎ তিন মাস পর নোটিশে উল্লেখ ছিল, চেয়ারম্যানকেও এক কপি দেওয়া হয়েছে কিন্তু চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি, সেখানে কোনো নোটিশ আসেনি এবং চেয়ারম্যান বা অন্য মাধ্যমে কোনো সমঝোতা হয়নি

2.সমাধান

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর () ধারা অনুযায়ী হিল্লা বিয়ে বা অন্তর্বর্তী বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই ধরনের বিয়ে আইনের পরিপন্থী তালাক বৈধ হলেও আপনাদের আবার বিয়েতে কোনো বাধা নেই তা ছাড়া তালাক কার্যকর না হলে আপনি দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন

3.সমস্যা


আমি একজন ছাত্র বয়স ২৫ বছর কয়েক মাস আগে আমাদের প্রতিবেশী ২০ বছর বয়সী অবিবাহিত বাকপ্রতিবন্ধী একটি মেয়ে গর্ভপাত করে মেয়েটির পরিবারের লোকজন পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার ওপর এর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা চালায় এবং মেয়েটিকেও আমার কথা ইশারায় শিখিয়ে দেয় এলাকায় তারা প্রভাবশালী বিধায় মেয়েটির সঙ্গে জোরপূর্বক আমার বিয়ে নিবন্ধন করানোর পাঁয়তারা করলে ভয়ে আমি নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই তারা আমাকে না পেয়ে আমার মা-বাবাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে মেয়েটির নামে আমার মায়ের নিজ নামের ১৫ শতাংশ জমি ক্রয় হিসেবে নিবন্ধন করিয়ে নেয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি চার মাস পর বাড়িতে ফিরে আসি এবং দুই মাস হলো বাড়িতেই থাকছি এই দুই মাসে তারা আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে শুধু তা- নয়, এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মামলার পাঁয়তারা করছে মামলা করার জন্য যদিও তাদের কাছে ডাক্তারি পরীক্ষার কাগজপত্র নেই তবু তারা বিভিন্ন মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে মামলা করবে বলে জানায় অবস্থায় আমি কী করব? যদি মামলা করে, তবে সেটি কার্যকর হবে কি?

3.সমাধান

আপনার চিঠির তথ্য অনুযায়ী মায়ের নামের জমি মেয়েটিকে নিবন্ধন করে দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে রকম পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন পর দৈহিক সম্পর্কের জন্য দায়ী করে মামলা দায়ের যথাযথ নয় তবে ধরনের মামলা প্রতিরোধ করার কোনো সুযোগ আপনার নেই আমার পরামর্শ হচ্ছে, ধরনের মামলা হলে আপনার দায়িত্ব মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বি্বতা করা একই সঙ্গে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা

4.সমস্যা 

আমার দাদি ১৯৯৪ সালে আমার ফুফুকে তাঁর সম্পত্তি আমার আব্বার অজান্তে দলিল নিবন্ধন করে দিয়ে দেন প্রায় পাঁচ বছর পর আমরা কথা জানতে পারি হিসেবে ফুফু তাঁর নিজের দাদির সম্পত্তির মালিক ফুফু আমাদের বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে আমাদের আপত্তিতে তা পারেননি ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তাঁর জায়গা স্থানীয় এক মাদ্রাসায় ২০০৮ সালের জুন-জুলাই মাসে (বিক্রি নয়, মূল্য ধার্য করে) দান করে দেন তখনই আমরা দান করা জায়গাটি ফেরত আনার চেষ্টা করি কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জায়গাটির উচ্চমূল্য দাবি করায় আমরা তা ফেরত আনতে পারিনি উল্লেখ্য, দান করা জায়গাটিই আমাদের বসতভিটা আমার প্রশ্ন, শফি বা অন্য কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা জায়গাটি ফেরত পাব কি? (আমরা জানতাম, শফির মেয়াদ তিন মাস আর দানপত্রে কোনো শফি নেই ঠিক কি?)

4.সমাধান

আপনার ফুফু তাঁর সম্পত্তি যে মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন, তা কার্যকর হয়ে গেছে এই দান করা সম্পত্তিতে অগ্রক্রয় (প্রিএম্পশন) বা মুসলিম আইন অনুযায়ী শফি প্রযোজ্য হবে না এখানে উল্লেখ্য, দানের ক্ষেত্রে অগ্রক্রয়ের অধিকার সৃষ্টি হয় না অগ্রক্রয়ের অধিকার একটি আইন নির্ধারিত অধিকার সুতরাং আইনে এই অধিকার না থাকলে অন্য কোনোভাবে এই অধিকার প্রয়োগ করা যায় না ক্ষেত্রে আপনি আপস-মীমাংসার মাধ্যমে অথবা বিনিময়ের মাধ্যমে জায়গাটি ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন

5.সমস্যা

আমি একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমার বয়স ২১ বছর পাঁচ বছর ধরে আমার একজনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বাবা-মায়ের ইচ্ছায় আমার চেয়েও ১৬ বছরের বড় অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য হই কিন্তু আমি আমার স্বামীকে মন থেকে মেনে নিতে পারিনি কারণ, তার মেজাজ সব সময় খিটখিটে থাকে, প্রবল সন্দেহপ্রবণ এবং কারণে-অকারণে খারাপ ব্যবহার করে ইত্যাদি এখন আমি তাকে তালাক দিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত জন্য আমাকে কী করতে হবে? সে আমার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে কি? তাতে আমার সরকারি চাকরিতে কোনো সমস্যা হবে কি? উল্লেখ্য, দেনমোহরের টাকার প্রতি আমার কোনো দাবি নেই এবং তার দেওয়া ১০ ভরি স্বর্ণও তাকে ফিরিয়ে দেব আমার কাছে বিয়ের কোনো কাগজপত্র নেই আর এর মধ্যে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছি

5.সমাধান

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী তালাক- তাউফিজ বা তালাকের অর্পিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার রাখেন বর্তমানে ছাপানো কাবিননামায় এই ক্ষমতা দেওয়া থাকে আপনি তালাক প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে লিখিত নোটিশ দিয়ে নোটিশের একটি অনুলিপি স্বামীকে সরবরাহ করবেন সাধারণত চেয়ারম্যান কর্তৃক নোটিশপ্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয় কিন্তু যেহেতু আপনি অন্তঃসত্ত্বা, সেহেতু আপনার গর্ভকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরই এই তালাক কার্যকর হবে



6.সমস্যা

আমি একটি স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করি আমার স্বামীর বাড়ি বাবার বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে ২০০৬ সালে আমার বিয়ে হয় পারিবারিকভাবেই বিয়ের পর জানতে পারলাম, আমার স্বামীর পাঁচ লাখ টাকা ঋণ আছে সে এই টাকা শোধ দেওয়ার জন্য আমার পরিবারকে চাপ দেয় আমার পরিবারের পক্ষে এত টাকা দেওয়া অসম্ভব, এটা জানতে পারার পর সে এবং তার পরিবার মিলে আমাকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন শুরু করে আমার তিন বছরের একটি মেয়ে আছে ওদের যন্ত্রণায় শ্বশুরবাড়িতে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে আমি মেয়েকে নিয়ে বাবার বাসায় চলে এসেছি এক বছর ধরে স্বামী আমাকে কোনো ভরণপোষণ দেয় না আমি কোনো কাজে বের হলে তার পালিত কিছু বখাটে খুব বিরক্ত করে আমার নামে কুৎসা রটায় আমি আর তার সংসার করতে চাই না ভরণপোষণ চাইলে উল্টো ধমক দেয় কিভাবে আমি আমার দেনমোহর ভরণপোষণের টাকা পেতে পারি? আইনগত কী উপায়ে আমি আমার মেয়েকে আমার কাছে রাখতে পারি, যাতে সে কখনো দাবি না করতে পারে? আমি কোথায় গেলে কম খরচে আইনগত সহায়তা পাব?

6.সমাধান

আপনি পারিবারিক আদালতে আপনার আপনার মেয়ের ভরণপোষণ দেনমোহরের পাওনা অর্থ দাবি করে মামলা করতে পারেন আইনগতভাবে আপনি আপনার মেয়েকে তার বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত আপনার হেফাজতে রাখতে পারেন আপনি আইনগত সহায়তার জন্য আইন সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন এসব প্রতিষ্ঠান মামলা করার ব্যাপারে সহায়তা করে থাকে
 

2 comments:

  1. problem or question ki ekhanei post korte parbo?

    ReplyDelete
  2. Nice post,
    ফৌজদারী কার্যবিধি ও দন্ডবিধি আইন সম্পর্কে ভাল ভাবে বাংলাই জানতে হলে হলে নিচের সাইটে জান।
    ফৌজদারী কার্যবিধি
    দন্ডবিধি

    ReplyDelete